ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম


সময় ডেস্ক :    |    ০৯:৩৮ এএম, ২০২৩-১২-০৯

ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

ডেস্ক রিপোর্ট : 

আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এ ঘটনার জেরে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি হয়েছে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা, সন্ধ্যা নামতেই একই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়! পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু বাজারে ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছেন। এক কেজি পেঁয়াজে ৫০–৬০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়, বিকেলে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। এছাড়া চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়, সকালে বিক্রি হয়েছে তা ৮০ টাকায়।


চাক্তাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত আরো দুইবার এভাবে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। আসলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এর আগে গত আগস্টে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটি বলবৎ থাকার কথা ছিল। সেই আদেশ শেষ হওয়ার আগেই এখন একেবারে রপ্তানিই বন্ধ করে দিয়েছে। গত ২০১৯ সালে ও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দুই দফায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরমধ্যে গত ২০১৯ সালে তো পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এত কিছুর পরেও আশার কথা হলো–আগামী সপ্তাহে বাজারে আসছে পাবনা ঈশ্বরদীর দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তখন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাবে। আর দাম কমবে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি–১ (তাহেরপুরী), বারি–২ (রবি মৌসুম), বারি–৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছর জুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।

চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে শুল্ক আরোপ করে এবং ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়ে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। এখন বাজার অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ হচ্ছে, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এখন সরকারের উচিত হবে দ্রুত বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখা। আসলে পেঁয়াজের দাম বাড়লে বারবার সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা বলা হয়। পেঁয়াজ কখনো নির্দিষ্ট সময়ের বেশিদিন মজুদ করে রাখা যায় না। যারা সিন্ডিকেটের কথা বলো–তারা আসলে না জেনে কথা বলে। পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। আরেকটি বিষয় হচ্ছে–বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পদ্ধতি আরো সহজ করতে হবে। কারণ বর্তমানে এলসিতে শতভাগ মার্জিন পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই এখন পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে যদি আগের মতো ১০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলার অনুমতি দেয়া হয়, তবে ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ না পেলে বিক্রি করবেন কোত্থেকে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। এখন একদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়ে গেছে ৫০ টাকা! ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, এই খবরে এত টাকা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) জারি আদেশে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।