জিল্লুর ভান্ডারির হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান শিশু পুত্র মিনহাজ

মামলার রায় ২৭ জানুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১০:৩৭ এএম, ২০২২-০১-২০

 জিল্লুর ভান্ডারির হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান শিশু পুত্র মিনহাজ


নিজস্ব প্রতিবেদক : পিতা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এগার বছর বয়সী মিনহাজুর রহমান। ইতিমধ্যে আদালত ভবনের সামনে প্লেকার্ড হাতে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এ শিশু। মাত্র চার বছর বয়সে তার পিতা জিল্লুর রহমান ভান্ডারিকে নশংসভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ রয়েছে আগামী ২৭ জানুয়ারি। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি রাতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রানীরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটকের কাছে জিল্লুর রহমান ওরফে জিল্লুর ভাণ্ডারিকে মারধরের পর গুলি করে  নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল।

শিশু পুত্র মিনহাজ বলেন, ‘আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে আদালতের কাছে তাদের শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। চার বছর বয়সে তারা বাবাকে খুন করে আমাকে এতিম করেছে।’  
ভান্ডারির অসুস্থ বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগমও একই কথা জানিয়ে বললেন, আমার ছেলেকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে তারা। মেরেই যদি ফেলবে তবে এতো কষ্ট দিয়ে মারল কেন? ছেলে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির খবরটা আমি শুনে যেতে চাই। 

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) লোকমান হোসেন চৌধুরী জানান, `রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ২৭ জানুয়ারি রায় ঘোষনার নতুন তারিখ ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম। ওইদিন রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশা করছি।'

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশের দেয়া অভিযোগ পত্রের উপর নারাজি দিলে অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেন আদালত। মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি।


২০১৯ সালের ২৮ মে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলার অভিযোগপত্রে মোট ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।


আসামিদের মধ্যে শহীদুল ইসলাম খোকন, রমিজ উদ্দিন রঞ্জু ও জাহাঙ্গীর কারাগারে আছেন। বাকিদের মধ্যে ইসমাইল ওরফে পিস্তল ইসমাইল, জসিম, কামাল, আবু, তোতাইয়া, নাছির ও সুমন পলাতক এবং আজিম, নাজিম ও শাহাব উদ্দিন জামিনে আছেন।


আসামি রমিজ উদ্দিন ওরফে রঞ্জুকে গত ২ জানুয়ারি রাতে পটিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাইপাস সড়ক থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জিল্লুর ভাণ্ডারির ভাই মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ঘটনার তিনমাস আগে কাতার নেন আসামি ইসমাইল ওরফে পিস্তল ইসমাইলের ভাই মোহাম্মদ জব্বার।
পরবর্তীতে ভিসা জটিলতা নিয়ে বাবলুর সঙ্গে জব্বারের কথা কাটাকাটি হয়। এ অবস্থায় বাবলুর ভিসা বাতিল করে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেন জব্বার।

২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি রাতে জব্বারের ভাই ইসমাইলকে রানিরহাট বাজারে পেয়ে জিল্লুর ভাণ্ডারি তার ছোট ভাইকে দেশে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চান। এবং ভিসা বাবদ দেওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত চান জিল্লুর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন সন্ধ্যায় জিল্লুরকে একা পেয়ে মারধর করে আসামিরা। এক পর্যায়ে তার পায়ে গুলি করা হয়।


আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে রাতেই তার মৃত্যু হয়।   


নিহতের ছোট ভাই সৌদি আরব প্রবাসী মো. ইকবাল হোসেন জানান, আমার বড় ভাইকে কোন কারন ছাড়াই নৃশংসভাবে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। সাত বছর ধরে ভাই হত্যার বিচার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষনার নতুন তারিখ রয়েছে। আশা করছি আসামিদের সবোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবে। অভিযুক্ত ১৩ আসামি এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। প্রত্যকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রধান আসামি শহিদুল ইসলাম খোকন একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে আমার বড় ভাইকে খুন করেছে।
এমএন/ সি