যেভাবে বুঝবেন হাড়ে ক্ষয় ধরেছে


সময় ডেস্ক :    |    ১২:১৪ পিএম, ২০২১-০৭-২৫

যেভাবে বুঝবেন হাড়ে ক্ষয় ধরেছে

হাড় ক্ষয় একটি জটিল সমস্যা।  বর্তমান সময়ে এই রোগে অনেকেই ভুগছেন।  দীর্ঘদিন এই সমস্যা জিইয়ে রেখে একটা পর্যায়ে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। 

 

শুরুতে হাড় ক্ষয় রোগ শনাক্ত করা গেলে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্তি মেলে।  

হাড়ক্ষয়ের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. এসি সাহা। 

তিনি বলেন, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ, যার ফলে হাড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যাওয়ায় হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে ক্রমেই হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

কারণ

* হাড়ের গঠন ও ক্ষয়ের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।

* মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাব।

* থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিজনিত সমস্যা।

* অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ।

* জেনেটিক বা বংশানুক্রমিক রোগ যেমন- হাড়ের ক্যান্সার ইত্যাদি।

উপসর্গ ও লক্ষণ

অস্টিওপোরোসিসে হাড় নীরবে ক্ষয় হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হাড় ভাঙার মাধ্যমে এর উপস্থিতি প্রথমে টের পাওয়া যায়। প্রধান লক্ষণ-

* হাড় ও পেশিতে ব্যথা।

* ঘাড় ও পিঠে ব্যথা।

* খুব সহজে দেহের বিভিন্ন স্থানে হাড় (বিশেষ করে মেরুদণ্ড, কোমর বা কব্জির হাড়) ভেঙে যাওয়া।

* কুঁজো হয়ে যাওয়া।

যাদের ঝুঁকি বেশি

* মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ-পরবর্তী মহিলা।

* অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা।

* ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা।

* শরীরচর্চা না করা।

* রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাত।

* এইডস, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ এবং এসব রোগের ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।

* দীর্ঘ দিন ধরে কটিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করা।

যেভাবে শনাক্ত করবেন

সাধারণ এক্স-রে দ্বারা অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। তবে সঠিকভাবে এর মাত্রা জানতে হলে বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) পরীক্ষা করা দরকার। সাধারণত কোমর, মেরুদণ্ড বা কব্জির ডেক্সা স্ক্যান করে বিএমডির সঠিক মাত্রা নির্ণয় করা হয়। বিএমডি দ্বারা হাড়ের ঘনত্ব সঠিকভাবে নির্ণয় করে হাড় ভাঙার ঝুঁকি এবং এর সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা যায়।

বিএমডির মাত্রাগুলো জেনে নেয়া যাক

* স্বাভাবিক : I score-ISD এর সমান বা ওপর (পজেটিভ)

* অস্টিওপেনিয়া : T score- ISD থেকে-2.5 SD

* অস্টিওপোরোসিস : T score- 2.5 SD থেকে কম (নেগেটিভ)

কী করবেন 

* সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

* পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।

* নিয়মিত শরীরচর্চা করা (যেমন- নিয়মিত হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা ইত্যাদি)।

* ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকা।

ক্যালসিয়াম : প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের (১৮-৫০ বছর পর্যন্ত) দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫১ বছর বা তদূর্ধ্বে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাবার থেকে গ্রহণ করা উচিত। দুধ, শাকসবজি, হাড়সহ ছোট মাছ, ফলমূল, সরিষার তেল ইত্যাদি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।

ভিটামিন ‘ডি’ : ভিটামিন ‘ডি’-এর অন্যতম উৎস হল সূর্যালোক।  মানবদেহের অভ্যন্তরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হওয়ায় একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোক দেহের সংস্পর্শে আসা প্রয়োজনীয়। সামুদ্রিক মাছ (যেমন- টুনা, সার্ডিন, স্যালমন ইত্যাদি), কড লিভার তেল, ডিম, দুধ, গরুর কলিজা, মাখন ইত্যাদি ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার।

ব্যায়াম: ব্যায়ামের মাধ্যমে সুস্থ হাড় পাওয়া সম্ভব।  নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, সাইকেল চালান, সাঁতার কাটার মাধ্যমে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

চিকিৎসা

সঠিক সময়ে অস্টিওপোরোসিসে চিকিৎসা না নিলে দেহের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক বিবেচনায় দুঃসহ জীবনযাপন করতে হয়। বিশ্বজুড়ে প্রতি পাঁচজনে একজন রোগী হাড় ভাঙার এক বছরের মধ্যে মারা যায়। কাজেই অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তার দিকে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। জীবনযাত্রার সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত।

* নিয়মিত ব্যায়াম করা।

* ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা।

* শরীরে ওজন কমান, ফাস্টফুড ও চর্বিজাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা।

* পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ছোট মাছ, দুধ, ডিম ইত্যাদি গ্রহণ করা।

* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রার ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।

* বয়স্ক পুরুষ বা নারী এবং মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’-এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাড় ক্ষয় প্রতিরোধকারী ওষুধ যেমন- বিসফসফোনেট, এলেনড্রোনিক এসিড, ইবানড্রোমি এসিড, জোলেনড্রোনিক এসিড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

অস্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে হার ছিদ্রযুক্ত, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।  সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন- নামাজ পড়া, গোসল করা, টয়লেটে যাওয়া, হাঁটাচলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।