বায়েজিদ বার্মা কলোনি : আতংকের নাম শীর্ষ সন্ত্রাসী সাইফুল, সবুজ, সামশু  


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৯:৫৫ এএম, ২০২১-০৬-২৪

বায়েজিদ বার্মা কলোনি : আতংকের নাম শীর্ষ সন্ত্রাসী সাইফুল, সবুজ, সামশু  

সাইফুল ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় এখন বড় আতংক বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলসহ তার অপর দুই ভাই। সাইফুলের ছত্রছায়ায় থেকে সবুজ ও সামশু নামে এ দুই এলাকায় খুন, মারামারি, দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন। সেখানে তারা রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সম্প্রতি বায়েজিদ থানা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সাইফুল। এর কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয় আরেক ভাই সবুজ। এখন এলাকা চষে বেড়াচ্ছে সামশু। সাইফুল ও সবুজ গ্রেফতার হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতংক কাটেনি। 
স্থানীয়রা জানান, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেও কিছুদিন না যেতেই জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। 
সাইফুল বায়েজিদ থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে খুনসহ নানা অভিযোগে ১৮টি মামলা আছে। এর মধ্যে সবুজের বিরুদ্ধে খুন ও মারামারিসহ ২১টি মামলা আছে। সামশুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা আছে। 
জানা গেছে, বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় সরকারি জমি দখল করে বার্মা কলোনি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বসবাসকারী বেশির ভাগই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এ কারণে এটি বার্মা কলোনি হিসাবে পরিচিত। এখানে সাইফুলের গোটা পরিবার বাস করে। দুই ভাইকে নিয়ে সাইফুল এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। লোকজনকে তারা আতঙ্কের মধ্যে রেখেছেন। স্থানীয়রা তাদের ভয়ে কথাও বলতে পারে না। বার্মা কলোনির সরকারি জমি তারা বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন। এছাড়া সেখানে বসবাসকারীদের মাসে মাসে চাঁদা দিতে হয়। 

 

ওই এলাকার বাসিন্দা মিজানুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, সাইফুল ও তার অপর দুই ভাই সবুজ ও সামশু সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করে। কেউ ভবন নির্মাণ করলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। নয়তো তাদের কাছ থেকে চড়া দামে ইট-বালুসহ নির্মাণসামগ্রী নিতে হয়। তারা বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার বার্মা কলোনী, হামজারবাগ, হিলভিউ, মোহাম্মদনগর, আমিন জুট মিলস্, আলী নগর, পাঁচলাইশ থানাধীন ফরেস্ট, রংপুর কলোনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। সাইফুলসহ তার অপর দুই ভাইয়ের আতংকে এলাকার লোকজন তটস্থ থাকে। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোবারক আলী জানান, ১৯৬৩ সালের দিকে বার্মা (মিয়ানমার) থেকে সাইফুলের বাবা নুরুল আলম চট্টগ্রাম এসেছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। সাইফুল ও তার দুই ভাই শুধু বার্মা কলোনিতে নয়; পাশের আমীন কলোনি, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কটি এলাকায় নানা অপকর্ম করে আসছেন। কেউ ভবন নির্মাণ করলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এর বাইরে একজনের জমি অন্যজনকে দখল পাইয়ে দেওয়া, কিংবা একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করাসহ নানা অপকর্মে তারা লিপ্ত। চসিক নির্বাচনের দিন সাইফুল ও তার ভাইয়েরা বেশ কয়েকজনকে কুপিয়েছে। দুই মাসে সাইফুল অন্তত চারবার গ্রেফতার হলেও বারবার জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। ১৬ জুন রাতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুল গ্রেফতার হন। এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটি গেটের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিনটি কার্তুজ ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, এলাকায় কিশোর গ্যাং সৃষ্টিসহ তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মারামারিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।